খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ৭ জুন ২০১৬: খুনিদের রেহাই দেওয়া হবে না’ বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণায় আস্থা রাখতে পারছে না বিএনপি।
মদিনায় প্রবাসীদের সঙ্গে এক সভায় পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হত্যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই প্রতিক্রিয়া জানান।
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আমরা আস্থা রাখতে পারছি না। এ ধরনের কথা তিনি আগেও অনেকবার বলেছেন।
“এবার তো বলেছেন- বিচার হবেই, তো ভালো কথা। এর আগে দেশি-বিদেশি নাগরিক থেকে শুরু করে ব্লগার হত্যা হয়েছে, ভিন্নমত যারা পোষণ করেন তারা খুন হয়েছেন।”
প্রায় এক বছর ধরে অনেকটা একই কায়দায় এসব হত্যাকাণ্ড ঘটলেও এগুলোর সঙ্গে কারা জড়িত, তার কোনো নাগাল বা হদিস সরকার করতে পারছে না বলে দাবি করেন তিনি।
এই বিএনপি নেতার অভিযোগ, সরকার এসব হত্যাকাণ্ডের ‘কোনো তদন্ত না করেই চট করে দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে’ বিরোধী দলের কারও না কারও ওপর।
সৌদি আরব সফররত শেখ হাসিনা সোমবার বিকালে মদিনায় প্রবাসীদের সঙ্গে সাক্ষাতে চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুর হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলেন।
এই হত্যাকাণ্ডকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “একজন পুলিশ অফিসারের স্ত্রী; তার তো কোনো দোষ নাই। বাচ্চাকে স্কুলে দিতে গিয়েছিল, বাচ্চার সামনে তাকে হত্যা করেছে। ইনশাআল্লাহ, এগুলি ধরা পড়বে।
“এটা আমি বলতে পারি, যারা অন্যায় করেছে তারা ধরা পড়বে। তাদের রেহাই আমরা দেব না।”
তবে সরকারের জঙ্গিদমনের অঙ্গীকার ‘রাজনৈতিক চতুরতা ও ধাপ্পাবাজি’ ছাড়া আর কিছু নয় বলে মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা রিজভী।
তিনি বলেন, “যেহেতু এই ভোটারবিহীন সরকারের জনগণের কাছে কোনো দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহি নেই, যেহেতু জঙ্গিবাদের ভয়াল থাবায় বিরাজমান সংকটে সরকার মানুষের নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো তাগিদ অনুভব করে না, যেহেতু কখনো পুলিশকে চোখ রাঙিয়ে আবার কখনো দলের ক্যাডার সাজিয়ে বিরোধী দল দমন করতে কাজে লাগানো হয়, সেজন্যই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আজ ভেঙে পড়েছে।”
জঙ্গিবাদ নিয়ে সরকারের ‘উদাসীনতা’ জনগণকে ‘অলক্ষ্য কৃষ্ণগহববরের’ দিকে ঠেলে দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জঙ্গিদমনে ভূমিকার জন্য প্রশংসিত পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী খুন হওয়ার পরেও দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন রিজভী।
“বেশ কয়েক মাস ধরে এ সমস্ত হত্যাকাণ্ডে জড়িত জঙ্গিবাদকে মোকাবিলা করার পরিবর্তে মন্ত্রীর আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আত্মতৃপ্তিতে বোঝা যায়, রোমের মতো বাংলাদেশ পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও নীরোর মতো আত্মতুষ্টিতে তারা বাঁশি বাজিয়ে যাবেন।”
‘জঙ্গি আতঙ্ক জনগণের মনে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে’, তা ভিন্নদিকে নিতেই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ‘বিভিন্ন মিথ্যা মামলায়’ অভিযোগপত্র দেওয়া হচ্ছে বলেও দাবি করেন রিজভী।
তিনি বলেন, “ভোটারবিহীন সরকার যখন বেকাদায় পড়ে এবং চারদিক থেকে যখন বিপদ ঘনিয়ে আসে তখনই জনদৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য নানামুখী কারসাজি ও কৌশলের আশ্রয় নেয়।
“চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে চারটি মামলায় অভিযোগপত্র প্রদান সেই কারসাজিরই অংশ। আমরা এহেন অভিযোগপত্র দায়েরের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
ঢাকার দারুস সালাম থানার বিশেষ ক্ষমতা আইনের চারটি মামলায় সম্প্রতি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।
সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে রোজায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি নিয়েও কথা বলেন রুহুল কবির রিজভী।
ক্ষমতাসীনরা ‘সিন্ডিকেট’ করে জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, কেন্দ্রীয় নেতা এম এ মালেক, তাইফুল ইসলাম টিপু, ইউনুস মৃধা প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।