Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

12kখোলা বাজার২৪, বুধবার, ৬ জুলাই ২০১৬: হালে বাংলাদেশ-ভারতে জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার পর বলেছেন ‘আমি মনে করি, সব ধর্মেরই এক কথা। মিথ্যে বলো না। সৎ থাকো। বড়দের সম্মান কর। তুমি যদি সত্যিই জেহাদ করবে, ধর্মের জন্য লড়াই করবে, তা হলে মানুষকে বোঝাতে পার। খুন করবে কেন?
মঙ্গলবার কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় এই প্রতিক্রিয়া সম্বলিত তার একটি লেখা প্রকাশিত হয়। লেখাটি পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো-
গত শুক্রবার রাত সাড়ে দশটা। অনেক হ্যারাসমেন্ট সামলে সবে মুম্বইয়ের হোটেলে চেক-ইন করেছি। রুমে পৌঁছনোর আগেই আম্মুর ফোন, ‘তুই ভাল আছিস্ত’। আমি বললাম ‘হ্যাঁ। কেন বলো তো?’ মা শুধু বলল, ‘সাবধানে থাকিস।’
খুব ক্লান্ত ছিলাম। প্রথমে এয়ারপোর্টে ভিসা ইমিগ্রেশন নিয়ে প্রচুর প্রশ্ন। বাংলাদেশের পাসপোর্ট রয়েছে বলে অনেক হ্যারাসমেন্ট। হোটেলেও প্রথমে আমার নাম গুগ্ল করল। তারপর শিওর হয়ে তবে ঢুকতে দিয়েছিল। তাই মায়ের ফোনটা নিয়ে অত আর ভাবিনি। সব সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ করে ঘুমোতে চলে গিয়েছিলাম।
রাত আড়াইটে। আবার আম্মুর ফোন। একই প্রশ্ন। আমি বললাম, ‘একদম ঠিক আছি। কী হয়েছে বলো তো? কেন এমন করছ?’ মা বলল, ‘সাবধানে থাকিস। একা আছিস। পরে ফোন করব।’
মায়ের গলাটা অন্য রকম লাগছিল। কিন্তু ব্যাপারটা কী বুঝতেই পারছিলাম না। কি মনে হতে ফোনে নেটটা অন করলাম। একে একে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটারৃ। ছবি দেখলাম। আম্মুর গলাটা কেন কাঁপছিল, আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল। দেশ থেকে বহু দূরে মুম্বইয়ের সাত তারা হোটেলে বসে ভয়ে আমার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। এত রক্তৃ! একটাই কথা মনে হল, আমিও তো ওখানে থাকতে পারতাম!
সারা রাত ঘুমোতে পারিনি জানেন! পরের দিন সাড়ে পাঁচটায় কলটাইম। ও সব তখন মাথাতেই নেই। ওই রাতেই সব আত্মীয়দের ফোন করতে শুরু করলাম। মা আমাকে কিচ্ছু বলেনি। যদি আমি টেনশন করি, যদি আমি ভয় পাই। বোন সবটা বলল। ও তো ট্রমার মধ্যে চলে গিয়েছিল। গুলশনের হোলি আর্টিজেনে ও প্রায়ই যেত বন্ধুদের নিয়ে। অদ্ভুত এবং কাকতালীয় ব্যাপার কি জানেন, আমি কখনও ওই রেস্তোরাঁর ভেতরে যাইনি। এমনও হয়েছে, ওর গেট থেকে কাউকে পিকআপ করেছি। তবে ভেতরে ঢুকিনি।
গুলশন তো বাংলাদেশের মোস্ট সফিস্টিকেটেড এরিয়া। আপনারা জানেন হয়তো, ওর ঠিক পিছনেই খালেদা জিয়া থাকেন। ওখান থেকে ১৫ মিনিট দূরে ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় আমার বাসা। ওই রাতের পর থেকে আমরা সবাই ট্রমাটাইজড। পরের দিন সকালে একটা মর্মান্তিক খবর পেলাম। এই ভয়ানক হামলায় আমি আমার এক প্রিয়জনকে হারিয়েছি। আমার পরিবার এক অভিভাবককে হারিয়েছে। এ আমার স্বজন হারানোর যন্ত্রণা।
আমি ঠিক জানি না, তবে শুনলাম যারা এগুলো করেছে তারা ইয়াং জেনারেশন। ফ্রেশ ব্লাড। পড়াশোনায় তুখোড়। টেকনোলজিক্যালি অ্যাডভান্স। একটাই কথা মনে হচ্ছে, এত সুযোগসুবিধে থাকার পরেও এরা নিজের মেন্টালিটি আপগ্রেড করছে না?
আজ তোমরা এটা যার জন্য করেছ, আই অ্যাম সরি, বলতে বাধ্য হচ্ছি আমার ইসলাম ধর্ম এ কথা বলে না!
হিজাব পরেনি বলে কাউকে খুন করতে তুমি পার না। তুমি কত জনকে মারবে বলতে পার? যদি কেউ বড়দের সম্মান না করে, মিথ্যে কথা বলে, তা হলে আর হিজাব পরে লাভ কী? এটা ঠিক যে, আমাদের ধর্মে আল্লা মেয়েদের হিজাব পরতে বলেছে। তার আসল মানেটা হচ্ছে শরীরকে কভার করা। কিন্তু এখন তো এটার অন্য মানে হচ্ছে। এখন তো প্রচুর ফ্যাশন হয়েছে, স্টাইল হয়েছে। ফিটেড বোরখা পরে, হিজাব পরে, প্রিটি লেডি হয়ে ঘুরে বেড়ানো, আর লোককে বলা, দেখো আমি তো হিজাব পরছি। কিন্তু এটা তো হিজাব পরা নয়।
জানেন, আমার পরিবারে সবাই হিজাব পরে। কিন্তু, আমি পরি না। আসলে আমরা এখন এমন একটা সময়ে আছি, যেখানে কারও ওপর জোর করে তুমি কিছু চাপিয়ে দিতে পার না। কিন্তু, এ জন্য কাউকে খুন করে ফেলবে?
আমি মনে করি, সব ধর্মেরই এক কথা। মিথ্যে বলো না। সৎ থাকো। বড়দের সম্মান কর। তুমি যদি সত্যিই জেহাদ করবে, ধর্মের জন্য লড়াই করবে, তা হলে মানুষকে বোঝাতে পার। খুন করবে কেন?
ঈদে দেশে ফিরব। মেহেন্দিও লাগাব। কিন্তু তার রঙে লেগে থাকবে আমার স্বজন হারানোর কষ্ট। যদিও আমাদের সরকার সকলকে প্রোটেকশন দিচ্ছে, তবে এত বড় একটা ঘটনার পর একটু টেনশন তো থাকবেই।
ভয় লাগছে জানেন! মনে হচ্ছে, আমিও টার্গেট হতে পারি। কোনও দিন হয়তো জঙ্গিরা বলবে, ‘তুমি মুসলমান, তুমি সিনেমা করছ কেন? তাই তুমিই টার্গেট।’