Fri. Jun 20th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

27খোলা বাজার২৪, বুধবার, ১৩ জুলাই ২০১৬: মেহেরপুর : মেহেরপু-কুষ্টিয়া প্রধান সড়কের গাংনী উপজেলার আকুবপুর চটকাতলা নামক স্থানে মঙ্গলবার রাতে দুধর্ষ পরিবহন ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। রাস্তায় গাছ ফেলে প্রায় ঘন্টা ব্যাপী ডাকাতির ঘটনায় ব্যবসার সর্বস্ব হারিয়েছেন কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী। ভুক্তভোগী পরিবারে এখন শুধুই কান্নার রোল। এ তথ্য জানিয়ে ভুক্তভোগীরা বলেছেন, ছিনতাইকারীরা গরু ব্যবসায়ীদের কয়েকজনের ক্ষুদ্র পুঁজির সবই কেড়ে নিয়েছে। সাত জন গরু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫ লক্ষাধিক টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা। এ নিয়ে গত এক মাসে তিনটি ডাকাতির ঘটনা ঘটলো।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটার দিকে এ উপজেলার কামারখালী ও শিমুলতলা গ্রামের কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী দুটি ট্রাকযোগে রংপুরের বড়বাড়ীয়া গো-হাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। নিজ গ্রাম পার হয়ে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের গাংনী উপজেলার শেষ সীমান্ত খলিশাকুন্ডি ব্রীজের কাছাকাছি পৌঁছুলে ডাকাতির কবলে পড়েন। কয়েকজন ডাকাত সদস্য আগে থেকেই সেখানে সড়কে গাছ ফেলে দুপাশে কয়েকটি যানবাহন আটকে রেখেছিল। গরু ব্যবসায়ীদের বহন করা দুটি ট্রাকের চালক গাছ ফেলা দেখে ট্রাক ঘুরিয়ে পেছনের দিকে আসার চেষ্টা করে। এসময় দেশীয় অস্ত্র হাতে করে কয়েকজন ডাকাত সদস্য ট্রাক দুটিতে আক্রমণ করে। ট্রাকের ভেতর থাকা গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় তাদেরকে মারধর করে। এসময় কামারখালী গ্রামের গরু ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নানের দুই লক্ষ ৩০ হাজার, পানু মিয়ার ৫০ হাজার ও মহির উদ্দীনের কাছ থেকে ৯৫ হাজার টাকাসহ আরো কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নেয় বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
এদিকে শুধু গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নয় ঢাকাগামী একটি পরিবহনের যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা ও মালামাল লুটে নেয় ডাকাতরা। দীর্ঘ সময় ধরে সড়কে ডাকাতদের তা-ব চলায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে বামন্দী, কুমারীডাঙ্গা ক্যাম্প পুলিশ ও গাংনী থানার একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে চারদিক ঘিরে ফেলে। কিন্তু তার আগেই ডাকাতি করে সঁটকে পড়ে ডাকাতরা।
এদিকে ডাকাতির কবলে পড়ে ব্যবসার সব পুঁজি হারিয়ে ভুক্তভোগী গরু ব্যবসায়ীদের কয়েকজন মুর্ছা যুাচ্ছিলেন। তাদের পরিবারে এখন শুধুই কান্নার রোল। এ অবস্থায় কিভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাবেন তা ভেবে কোন কুল কিনারা পাচ্ছেন না তারা। ডাকাত দলের সদস্যদের গ্রেফতার ও ডাকাতি হওয়া টাকা উদ্ধারে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।
গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল থেকে জানান, পুলিশের তৎপরতায় রাস্তার গাছ সরিয়ে যান চলাচল শুরু হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত তা বের করে গ্রেফতার করার প্রক্রিয়া চলছে। ঘটনার পর থেকেই সব ক্যাম্পগুলোকে সতর্ক করে ডাকাতদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তবে গতরাত দুইটার দিকে এ সংবার লেখার সময় পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে আরো জানা গেছে, আলমডাঙ্গা পশু হাট থেকে গরু কেনাবেচা করে এলাকার ব্যবসায়ীরা বাড়ি ফেরার কারণে সন্ধ্যা থেকে ছাতিয়ান-বামন্দী সড়কে কুমারীডাঙ্গা পুলিশের টহল ছিল। পুলিশ যখন একেকটি করে গরুর গাড়ি পার করছিল তখন ডাকাতিস্থলে পুলিশের টহল ছিল না। আর এ সুযোগ কাজে লাগায় ডাকাতরা। তবে এ উপজেলার ডাকাতির ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের মধ্যে ওই চটকাতলা অন্যতম। তাই সেখানে নিয়মিত পুলিশ টহলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
উল্লেখ্য, গত ২২ জুন আমতৈল-ভোলাডাঙ্গা মাঠের মধ্যে ছিনতাইকারীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী আহত হন। আলমডাঙ্গা গো-হাট থেকে ফেরার পথে আমতৈল-ভোলাডাঙ্গা গ্রামের মাঠের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। এর কয়েকদিন পরে একই সড়কের সিন্দুরকোটা-শিমুলতলা মাঠের মধ্যে কয়েকজন মাছ ব্যবসায়ীকে মারধর করে টাকা ছিনিয়ে নেয় কয়েকজন ছিনতাইকারী। দীর্ঘদিন পরে ওই সড়কে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় ওই এলাকার ব্যবসায়ীসহ পথচারীদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। ওই এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী লালানসহ ৫জনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। আদালতের নির্দেশে তারা এখন জেল হাজতে। তবে ডাকাত দলের সদস্যদের আরো কে কে এলাকায় অবস্থান করছে এবং তার তৎপরতার বিষয়টি খতিয়ে দেখে গ্রেফতার অভিযান বাড়ানোর দাবি করেছেন এলাকাবাসী।