বাবা ভাই ও স্বজনদের নিয়ে পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করতে ১৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সড়কপথে দুটি মাইক্রোবাসে ঢাকা যাচ্ছিলেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের রুপশপুর গ্রামের মাওলানা আবু সুফিয়ান (২৬)। বিয়ে করে বউকে ঘরে তুলে মায়ের চিকিৎসার জন্য ডাক্তার দেখাতে সিলেট যাবার কথা ছিল তার। তার আগেই শুক্রবার সকাল ১০টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের শশই গ্রাম এলাকায় যাত্রীবাহী বাস এনা পরিবহনের আঘাতে বরের মাইক্রোবাসটি দুমড়ে মুছড়ে যায়।
দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই বর, ভাই বাবাসহ ৭ জনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে আরেক বরযাত্রীর মৃত্যু হয়। ফলে আবু সুফিয়ানের আর বিয়ে করে বউ ঘরে তোলা হয়নি ও মাকে নিয়ে ডাক্তারও দেখানো হল না। রুপশপুর গ্রাম এখন শুধুই নিস্তব্ধ একটি গ্রাম। একই পরিবারভুক্ত ৪জনসহ ৮জনের মৃত্যুতে গ্রামবাসী যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন। একই গ্রামের ৮জনের মর্মান্তিক মৃত্যুতে গোটা এলাকায় চলছে আহাজারি। সর্বত্র বিরাজ করছে শোকাচ্ছন্না পরিবেশ। পরিবারের স্বজনদের মধ্যে চলছে শোকের মাতম। রুপশপুর গ্রাম এখন শুধুই নিস্তব্ধ একটি মৃত্যুপুরী।
মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় মুন্সীবাজার ইউনিয়নের রুপশপুর গ্রামের আদিউর রহমান ওরফে সরফর মিয়া (৬০)-র ছেলে আবু সুফিয়ান (২৬), বরের চাচা মতিউর রহমান মুর্শেদ (৪২), মুর্শেদের ছেলে বরের চাচাতো ভাই আলী হোসেন (১২) বরের মামা হাজী আব্দুল হান্নান (৫৮), গ্রামবাসী দুরুদ মিয়া (৫৫), মোক্তাদির ওরফে মুকিত চৌধুরী(৬৫) ও মাওলানা সাইদুর রহমান (৪৫) মারা যান। হাজী আব্দুল হান্নান (৫৮), আলী হোসেন (১২), দুরুদ মিয়া (৫৫), ভাই মতিউর রহমান (৪২), মুকিত চৌধুরী (৬৫) ও সোহান মিয়া (৩৬)বরের পরিবার ভুক্ত চারজনসহ একই গ্রামের আটজনের আকস্মিক মৃত্যুতে পুরো গ্রামটি নিস্তব্ধ হয়ে যায়। খবর শুনার পর রুপশপুর গ্রামে শুরু হয় শোকের মাতম। দুর্ঘটনায় আহত জাকির হোসেন (১৮) সোহান মিয়া (২৬) ও কামরান মিয়া (২০) হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার রাত ৮টায় রুপশপুর গ্রামে গেলে নিহত বর আবু সুফিয়ানের মা জরিনা বেগম(৫০)-এর কান্নায় আকাশ যেন ভারী হয়ে উঠে। কেঁদে কেঁদে সাংবাদিকদের বলেন, তিন ছেলের মাঝে সে বড় ছেলে ছিল। বিয়ে করে ঘরে ফিরে আনন্দ করার কথা ছিল। দুর্ঘটনায় এ আনন্দ শোকে পরিনত হল। শোক শুধু শোক নয় পুরো পরিবারটি এখন ধ্বংসের মুখে পড়ে গেল। আনন্দ হয়ে গেল জনাজায় পরিনত, গ্রামবাসী একই কবর স্থানে এক সাথে আটটি কবর খুড়ে প্রস্তুত। রাত সাড়ে দশটায় নামাজে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়।
ইউপি সদস্য আরও বলেন, হাসি খুশিতে ভলপুর গ্রাম একটি দুর্ঘটনায় হাঁসির বদলে কান্নায় ভরে গেছে। রুপসপুর গ্রামে হাজারো জনতা ভিড় করছে। ঢাকায় বিয়ে করতে গিয়ে আরো৭ জনকে সাথে নিয় লাশ হয়ে ফিরল মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের রুপসপুর গ্রামের বর ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবু সুফিয়ান (২৫)।
গ্রাম সূত্রে আরও জানা যায়, নিহত বর আবু সুফিয়ান ঢাকায় একটি মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে আলেম পাশ করেছে। সে ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ছিল।