খােলা বাজার২৪। মঙ্গলবার , ২০ মার্চ ২০১৮ : মা কাঁদছেন। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তার কলিজার টুকরো সন্তান তাকে ছেড়ে চলে গেছে। চলে গেছে মানে নেই। নেই মানে মৃত্যু! মায়ের কান্নায় ভারি হচ্ছে বাতাস। মা মাটিতে গড়াগড়ি করে অাহাজারি করছেন, অামাকে একা রেখে কেন গেলি বাবা। অামি অার কেন বাঁচবো। অাল্লাহ, অামার সন্তানকে রেখে অামাকে নিলে না কেন!
সন্তানহারা প্রতি মায়ের শোক অভিন্ন। গরীবের মা বা ধনীর মা। সন্তান হারানোর শোক, বুকফাটা অার্তনাদ একই।
মায়ের সঙ্গে একটু অাধটু অামরাও কাঁদি। ক’দিন পর তা ভুলে যাই। কিন্তু মা ভুলেন না। অামাদের মৃত্যুশোক ভুলে থাকতেই হয়। এখানে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে বাঁচতে হয় অামাদের। এই দেশে প্রতিটি দিনই শোক দিবস। বললে কি ভুল হবে এখানে তারাই ভাগ্যবান যাদের ভাগ্যে স্বাভাবিক মৃত্যু জুটে।
এদেশের মানুষ প্রতিদিন বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হয় না ঠিকই। বিশ্বে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনাও খুব বেশি না। তবু এদেশে গড়ে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪-১৫ জন নিহত হয়। প্রায় বছরে লঞ্চ ডুবে শত মানুষ না ফেরার দেশে চলে যান। এখানে রাজনৈতিক সহিংসতায় ৪০ দিনে ৮৪ জনকে লাশ হতে হয় এ দেশে। এরমধ্যে ২৬ জনকে প্রাণ দিতে হয় কথিত বন্দুকযুদ্ধে। মৃত্যু এখানে অারও ভয়ঙ্করভাবে অাসে, প্রাণবন্ত, সুস্থ যুবককে সাদা পোষাকে একদল ধরে নিয়ে যায়। তারপর থেকে যুবকের মা শুধু কাঁদেন। কাঁদতে কাঁদতে চোখ অন্ধ হয়ে যায়। তার বুকের ধন অার ফিরে না। মা হয়তো শোক ধারণ করে পৃথিবীর ওপারে চলে যান। কিন্তু সন্তানকে অার দেখে যাওয়া হয় না।
এ দেশে এমন হয় সদ্য বিবাহিত যুবক নিখোঁজ। ধরে নিয়ে গেছে একদল। তার স্ত্রী, অনাগত সন্তানের জননী অাহাজারি করছেন, জন্মের পর অামার সন্তান তার বাবাকে দেখতে পাবে না।
এখানে মৃত্যু অারও কুৎসিত। সহিংসতার জন্যই এরকম বিপদ অাসে কী? তাহলে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি শেষে যে ছেলেটি তার মায়ের কাছে ফিরছিলো তাকে কারা ধরে নিয়ে গেলো। পরদিন কেন তার লাশ পাওয়া গেলো? কেন রিমান্ড শেষে সুস্থ ছেলেটি অসুস্থ হয়, মুহূর্তেই মারা যায়। এখানে বছরে সহস্রাধিক নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। প্রায় শত নির্যাতিতাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়।
অামরা সেই দেশের নাগরিক। এ যে মৃত্যু ও শোকের জনপদ। এখানে মৃত্যু অাসে ভয়ঙ্করভাবে। এখানে মানুষ স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চায়।
লেখাটি মানবজমিনের স্টাফ রিপোর্টার রুদ্র মিজানের ফেসবুক স্টাটাস থেকে নেয়া।