
২৭ সেপ্টেম্বর প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ মাঠে গড়ানোর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রহরও শেষ হওয়ার আয়োজন হয়। কিন্তু বৃষ্টি এসে সেই অপেক্ষার প্রহরটি করে আরো দীর্ঘায়িত। প্রথম ওয়ানডে ম্যাচটি হয় পরিত্যক্ত। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঘরের মাঠে খেলা দেখতে এসে শূন্য হাতে ফিরতে হয় দর্শকদেরও।
সূচি অনুযায়ী ২৯ সেপ্টেম্বর ছিল দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচ। সেটিও মাঠ উপযোগী না হওয়ায়, বাতিল হওয়ার পথে ছিল। কিন্তু বোর্ড সেটিকে একদিন পিছিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর আয়োজন করে, মাঠ খেলার উপযোগী করে। তবুও দর্শককূলের আবেগ-উত্তেজনার শেষ নেই। কানায় কানায়পূর্ণ সমর্থকদের করতালিতে মুখোরিত হয় পুরো স্টেডিয়াম।
পাকিস্তানের সাবেক অলরাউন্ডার ইমরান খান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানে ক্রিকেট ফেরাতে এক রকম মরিয়া ছিলেন। অবশেষে সেটি তিনি বাস্তব রূপ দেয়ার চেষ্টাও করে যাচ্ছেন।
- নিরাপত্তা
এই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদের পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির চেয়েও কঠোর নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। যেটি হোটেল থেকে ক্রিকেটারদের মাঠে নেয়ার দৃশ্যই বলে দেয়। করাচির অবস্থা এক প্রকার কারফিউ জারির মতো।
টুইটার ও সংবাদমাধ্যমগুলোর বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, ক্রিকেটারদের বাসকে নিরাপত্তার চাদরে মুডড়িয়ে মাঠে নিচ্ছিল পাকিস্তানের সেনা ও নিরাপত্তাকর্মীরা। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। মাচা গলারও সুযোগ নেই। সব মিলিয়ে ৪০টির মতো সাঁজোয়া যানের সাথে সামনে-পেছনে ছিল সাঁজোয়ো মটরসাইকেল। সেইসব গাড়িতে রয়েছেন সশস্ত্র নিরাপত্তাকর্মীরা। মটরসাইকেলও ছিলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। প্রায় প্রতিটি রক্ষীর হাতেই রয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্র। সবগুলো গাড়িই বুলেটপ্রুফ। সাথে ছিল অ্যাম্বুল্যান্সও। দেখে মনে হচ্ছিলো, কোনো যুদ্ধা মহড়া চলছে।
করাচির রাস্তার দুই ধারে ব্যানার, ফেস্টুন, প্লেকার্ড হাতে ‘পাকিস্তান জিন্দবাদ’, ‘ওয়েলকাম শ্রীলঙ্কা’ স্লোগান নিয়ে ক্রিকেটারদের আভ্যর্থনা জানায় উৎসাহী দর্শক।
১০ বছর পর ঘরের মাঠে খেলতে নেমে জ্বলে উঠলেন পাক ক্রিকেটাররাও। ৬৭ রানে শ্রীলঙ্কাকে পরাজিত করে সিরিজে এগিয়ে থাকল মিসবাহ-উল হকের শীষ্যরা।
খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে লঙ্কান কোচ রমেশ রত্নায়েকে বলেন, ‘এই সিরিজটা ডিসেম্বরের টেস্ট সিরিজের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে। চলতি সিরিজে আমরা যদি সুন্দরভাবে পাকিস্তানের মাঠে খেলে যেতে পারি তাহলে ডিসেম্বর আবারও আসব টেস্ট খেলতে।’
শ্রীলঙ্কা দলের এই সফর ক্রিকেট খেলুড়ে অন্য দেশগুলোকে পাকিস্তানে আসতে উৎসাহিত করবে। এমনটি জানিয়ে লংকান কোচ বলেন, ‘আমার মতে, এই সফর অন্য দেশগুলোকে পাকিস্তান সফরে আসার ব্যাপারে উৎসাহিত করবে।’
এখন দেখার বিষয় ঘরের মাঠে খেলা ফেরানোর আয়োজন কতটা সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে পারে পাকিস্তান।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ৩ মার্চ লাহোর গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে টেস্ট সিরিজের দ্বীতীয় টেস্টের তৃতীয় দিন খেলতে যাওয়ার পথে শ্রীলঙ্কা টিমের গাড়ি বহরে হামলা চালায় বন্দুকধারীরা। হামলায় ৬ জন পুলিশ সদস্য এবং দুই জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়। খেলোয়াড় আহত হন শ্রীলঙ্কার সাত ক্রিকেটার।
এরপর দীর্ঘদিন পাকিস্তানে আর কোন ক্রিকেট দল খেলতে যায় না। ছয় বছর পর ২০১৫ সালে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দল পাকিস্তানে সীমিত ওভারের সিরিজ খেলতে যায়। তবে শ্রীলঙ্কা দলের ওপর হামলার পর গত ১০ বছরে এখন পর্যন্ত কোন টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়নি পাকিস্তানে।