Mon. Jun 16th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements
খােলাবাজার ২৪,রবিবার,০৩নভেম্বর,২০১৯ঃ বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার মো. হানিফ উদ্দিন মিয়া উপমহাদেশে প্রথম কম্পিউটার সভ্যতার যাত্রা শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে সেদিন একটি মাত্র কম্পিউটার দিয়ে হানিফ মিয়ার হাত ধরে এই কমিউনিটির ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল। এর এটিই ছিল দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম কম্পিউটার।

ঢাকায় ডাক অধিদপ্তর মিলনায়তনে বাংলাদেশের প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার মোহাম্মদ হানিফ উদ্দিন মিয়া স্মরণে ডাক অধিদপ্তরের স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

মূলত আইয়ুব খানের আমলে ১৯৬৪ সালে (IBM Mainframes: 1620) কম্পিউটারটি তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার শুভেচ্ছা স্মারক হিসেবে পাঠায়। কিন্তু এই যন্ত্র আগে পশ্চিম পাকিস্তানের বাসিন্দাদের কেই চোখে দেখেনি। তাই কেউ এটি ব্যবহারও করতে পারে না। অনেক খোঁজাখুঁজি করে পূর্ব পাকিস্তানের একজনকে পাওয়া যায়। তার নাম হানিফ উদ্দিন।

সম্প্রতি ডাক অধিদপ্তরের মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এই মহান মানুষটিকে স্মরণ করা হয়। বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী শ্রদ্ধাভরে তাকে স্মরণ করেন। এদিন তার স্মরণে একটি ডাকটিকিটও অবমুক্ত করা হয়।

হানিফ সাহেবকে পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরে গিয়ে এই কম্পিউটার ব্যবহার করতে বলা হলো। কিন্তু তিনি বেঁকে বসেন। সরাসরি জানিয়ে দিলেন, নিজের দেশ ছেড়ে কোথাও যাবেন না। এ কারণেই ঢাউস আকারের কম্পিউটারটি এলো ঢাকার আণবিক শক্তি কমিশনে। আর হানিফ সাহেবের হাতেই শুরু হলো এদেশে প্রথম কম্পিউটারের পথ চলা।

পরমাণু বিজ্ঞানী হানিফ উদ্দিন মিয়া ১৯২৯ সালের ১ নভেম্বর নাটোরের সিংড়া উপজেলার হুলহুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুল শিক্ষক পিতা রজব আলী তালুকদারের দুই পুত্র ও এক কন্যাসন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ তিনি। সংসারে অভাব না থাকলেও উচ্চশিক্ষার জন্য জায়গির থাকতে হয় তাকে। ১৯৪৬ সালে ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৫১ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে বিএসসিতেও প্রথম বিভাগ লাভ করেন। এরপর ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই এমএসসি পরীক্ষায় ফলিত গণিতে প্রথম শ্রেণীতে স্বর্ণপদকসহ প্রথম স্থান অর্জন করেন।

এরপর ১৯৬০ সালে ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন থিওরি অ্যান্ড অটোমেশন, চেকোশ্লোভাক একাডেমি অব সায়েন্স, প্রাগ থেকে অ্যানালগ কম্পিউটার টেকনিক এবং ডিজিটাল কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সালে সিস্টেম অ্যানালিসিস, নিউমেরাল ম্যাথমেটিকস, অ্যাডভান্স কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, অপারেশন রিসার্চে এমআইটি (যুক্তরাষ্ট্র) কম্পিউটার সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

১৯৭৫ সালে আইবিএম রিসার্চ সেন্টার লন্ডন থেকে অপারেটিং সিস্টেম ও সিস্টেম প্রোগ্রামিংয়ে ট্রেনিং করেন। তারপর তিনি ১৯৭৫ থেকে ১৯৮০ সালে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থায় প্রোগ্রামার অ্যানালিস্ট হিসেবে অ্যানালাইসিস, ডিজাইন, সফটওয়্যার ইমপ্লিমেশন অব কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম সংক্রান্ত বিষয়ে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯৮৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে তিনি অঙ্কশাস্ত্র ও কম্পিউটার বিষয়ে শিক্ষকতা করেছেন।

পারিবারিক জীবনে স্ত্রী ফরিদা বেগম ও এক পুত্র এবং দুই কন্যা সন্তানের জনক দেশের প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার মো. হানিফ উদ্দিন উদ্দিন মিয়া। পুত্র শরীফ হাসান সুজা দীর্ঘ ২৩ বছর সিমেন্স বাংলাদেশে প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অন্যদিকে তার মেয়ে ডোরা শিরিন পেশায় একজন ডাক্তার। আর অপর মেয়ে নিতা শাহীন গৃহিণী।

এই কৃতী সন্তান বাংলাদেশ অ্যাটোমিক এনার্জি কমিশনের কম্পিউটার সার্ভিস ডিভিশনের ডিরেক্টর পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বিষয় কম্পিউটার সায়েন্স ও নিউমেরাল ম্যাথেমেটিকস থাকা সত্ত্বেও শিল্প-সাহিত্যসহ আরও নানাবিধ বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের প্রতি তার ছিল অপরিসীম আগ্রহ। তিনি বাংলা ও ইংলিশ ছাড়াও উর্দু, আরবি, হিন্দি, জার্মান ও রাশিয়ান ভাষা জানতেন।

২০০৭ সালের ১১ মার্চ না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি। তবে মৃত্যুর পূর্বে তিনি বিভিন্ন সময়ে গণিতশাস্ত্র ও কম্পিউটার বিষয়ে শিক্ষকতা করেছেন। বাংলাদেশ গণিত সমিতিরও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। বাংলাদেশ কম্পিউটার বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার সঙ্গে মোহাম্মদ হানিফ উদ্দিন মিয়ার নাম গভীরভাবে সম্পৃক্ত।