খোলা বাজার২৪ ॥ শনিবার, ১০ অক্টোবর ২০১৫ ‘পাগলের ডাক্তার’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার ভয়ে এমবিবিএসের পর অনেকেই মানসিক রোগ নিয়ে আগ্রহী হচ্ছেন না। তীব্র চিকিৎসক-সংকটের কারণে দেশের সব জেলায় মানসিক রোগের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আজ শনিবার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে আয়োজিত সেমিনারে এসব কথা বলেন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকেরা। এ বছর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের স্লোগান, ‘মানসিক স্বাস্থ্যে মর্যাদা বোধ’। দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে রোগীদের মর্যাদার পাশাপাশি চিকিৎসকদের মর্যাদা নিয়ে আলোচনা হয়। মূল প্রবন্ধে ইনস্টিটিউটের শিক্ষক জিল্লুর রহমান বলেন, দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ১৬ দশমিক ১ শতাংশ এবং শিশু-কিশোরদের মধ্যে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ মানসিক রোগে ভুগছে। মনোচিকিৎসকের সংখ্যা ১৯৫ ও মনোবিজ্ঞানীর সংখ্যা ৪৩ জন। গড়ে এক কোটি মানুষের চিকিৎসায় আছেন সাতজন মনোচিকিৎসক। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেন, মানসিক রোগের চিকিৎসকেরা সমাজে ‘পাগলের ডাক্তার’ বলে পরিচিতি পান। অন্যান্য রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞদের তুলনায় বেশি আয় করেন। স্বাস্থ্য বাজেটে মানসিক রোগের চিকিৎসায় বরাদ্দ অপ্রতুল। এমনকি সরকারি ২৯টি মেডিকেল কলেজের মধ্যে ১৩টিতে মানসিক রোগের চিকিৎসা হয়। সবকটি জেলা হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ নেই। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এমবিবিএসের পর অনেকেই মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে আগ্রহী হচ্ছেন না বলে জানান বক্তারা। কে কী ভাবছে বা বলছে, সেটা গায়ে না মাখার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, ‘পাগলের ডাক্তার বললে কী হবে? মানুষ কতটা সেবা পাচ্ছে, গবেষণা কেমন হচ্ছে, দক্ষতা কত বাড়ল, এসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে।’ আয়-রোজগার বাড়াতে গিয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইনস্টিটিউটে রোগীদের প্রতি কম মনোযোগ দেওয়া, রোগীদের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে পাঠানোর মতো ঘটনা ঘটছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সাবেক পরিচালক গোলাম রব্বানী মানসিক রোগী ও চিকিৎসকদের মর্যাদা বৃদ্ধিতে কয়েক বছর ধরে ঝুলে থাকা মানসিক স্বাস্থ্য আইনটি দ্রুত পাস হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. হুমায়ূন কবিরের পরামর্শে আমরা আইন কমিশনকে দেখিয়ে আইনটির খসড়া জমা দিলাম। এতে কমিশনের প্রধান খায়রুল হক একটি নোট লিখে দিয়েছেন। এখন বলা হচ্ছে, কমিশনের কাছে কেন যেতে হলো, ইত্যাদি ইত্যাদি।’ ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. আবদুল হামিদ বলেন, মর্যাদা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে সেবা বাড়াতে হবে। সরকারি মেডিকেল কলেজে জনবল ও রোগীদের জন্য আসনসংখ্যা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি বলে তিনি উল্লেখ করেন। বিধবা, বয়স্ক, দরিদ্র মানুষের মতো সরকার মানসিক রোগীদের ভাতা দিলে পরিবারে-সমাজে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে বলে মন্তব্য করেন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফারুক আলম।