Thu. Oct 30th, 2025
Advertisements

তৌফিকুর রহমান তাহের (সুনামগঞ্জ) শাল্লা প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা সদরের শাহীদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য নতুন ভবনের নির্মাণকাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ২৮ অক্টোবর (মঙ্গলবার) সরেজমিনে দেখা যায়, শ্রমিকরা ছোট ছোট ইটের খোয়া, নিম্নমানের ইট ও মাটি মিশ্রিত বালি দিয়ে ভবন নির্মাণের কাজ করছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদার ও দায়িত্বরত প্রকৌশলীর সিন্ডিকেট যোগসাজশ করে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে সরকারি অর্থ অপচয় করছে।

​এলাকাবাসী এবং স্থানীয় রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মীদের দাবি, নির্মাণকাজে ব্যবহৃত হচ্ছে অত্যন্ত নিম্নমানের সামগ্রী। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণস্থলে ব্যবহৃত বালিতে প্রচুর পরিমাণে মাটি ও কালো মিশ্রণ রয়েছে। পাশাপাশি খোয়া হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ছোট আকারের ইটের কণা।

উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী শাকিল আহমেদ জানান, “ভবন নির্মাণে ছোট ছোট ইটের কনক্রিট, নিম্ন মানের ইট ও মাটি মিশ্রিত বালি ব্যবহার করা হচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নির্মিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনের স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তা নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।”

কৃষক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক একরামুল হোসেন বলেন, “প্রকাশ্য দিবালোকে এভাবে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে সরকারি অর্থ অপচয় করা হচ্ছে। ঠিকাদার ও প্রকৌশলীর সিন্ডিকেট এর পেছনে কাজ করছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। আমরা দ্রুত তদন্ত করে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাই।”

​বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা এই অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও প্রধান শিক্ষকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
​স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সিরাজ মিয়া এই অনিয়মের বিরুদ্ধে তিনি বলেন, আমি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে যতটুকু পেরেছি সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারদের তাদের সিডিউল অনুযায়ী কাজ করার অনুরোধ জানিয়েছি। যতটুকু পেরেছি ততটুকু করছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ আমাকে বলেনি নিম্নমানের কাজ হচ্ছে। যদি কেউ বলত সিডিউল বহির্ভূত কাজ হচ্ছে তাহলে ভেরিফাই করে দেখতাম।

“স্কুল ভবন নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।

অন্যদিকে, শাহীদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরিফ মোহাম্মদ দুলাল এই বিষয়ে পুরোপুরি নীরব, তিনি বলেন স্কুল ভবন নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রীর বিষয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই। ইঞ্জিনিয়ার আছেন উনি সব দেখছেন বলে জানান তিনি। কিন্তু এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদারের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে তিনি অনিয়মের সুযোগ করে দিয়েছেন।

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ও পূর্বের পদক্ষেপ

​জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাসেত প্রকৌশলী লিমিটেড ও জাহানারা এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি টাকার এই নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এর দায়িত্বে রয়েছেন নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি।

কন্টাক্টার সাখাওয়াত হোসেন (ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি) অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, নিম্নমানের বালু ও খোয়া কেমনে হয় তা জানা নাই। আমাদের সবকিছু ভাল মেটেরিয়াল দিয়ে কাজ করছি। এই কাজ নিয়ে অনেক পেরেশানিতে আছি। অনেক মানুষ আমাকে ফোন দিয়ে আমি অমুক তমুক বলে ব্লেকমেইল করে সুবিধা ভোগ করছে। আর ভাল মালামাল আমরা দিতে চাই, কিন্তু অনেকেই ফোন দিয়ে বলে আমার মালামাল নিতে হবে, আর যদি না আনি আমাদের সমস্যা হয়। তাদের কাছ থেকেই ইট, বালু ও পাথর কিনতে হয় আমাদের। আমরা সুযোগ সুবিধা অনেকরেই দিছি। যাদের এই সুবিধা দিচ্ছি তারাই আবার আমাদের বিপক্ষে বলছে।

জেলা শিক্ষা প্রকৌশলী নয়ন মিয়া (বা সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলী) জানান, বালুর নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে টেস্ট করানো হবে এবং যদি কোনো অনিয়ম পাওয়া যায়, তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

উল্লেখ্য, এর আগে ৫ মে এলাকাবাসী নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সরেজমিনে এসে অনিয়মের সত্যতা পান এবং ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

​এলাকাবাসী বলছেন, এত বড় অনিয়ম চললেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও কর্তৃপক্ষের নীরবতা তাদের ক্ষুব্ধ করছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নির্মিত এই ভবন যেন টেকসই ও নিরাপদ হয়, সে নিশ্চয়তা সরকারকেই দিতে হবে।